যে চিত্র দেখা গেল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ১৫ আগাস্টের দিন

Bdnewstoday360


প্রায় সবার হাতে লাঠি, পাইপ। মাথায় জাতীয় পতাকা বাধা। কাউকে সন্দেহ হলেই জেরা করা হচ্ছে, তল্লাশি করা হচ্ছে ম।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ও আশেপাশে জোরদার ও সতর্ক অবস্থান নিয়ে আছেন এমন কয়েক শত মানুষ। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও দেখা যায়।


আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্টতা বা ১৫ই আগস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কোনো কর্মকাণ্ড পাওয়া গেছে, এমন কিছু মানুষকে রাস্তার বিপরীত পাশে অবস্থিত নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানায় অবস্থানকারীরা।


কয়েকজনকে মারধরও করতে দেখা গেছে। তবে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মারধরের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টাও করেন।


সকাল থেকে ঘুরে-ফিরে এই দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল মিরপুর রোডসহ লাগোয়া অন্যান্য সড়ক ও গলিতে।

শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। এই বাড়িতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান।


অন্যদিকে, মাত্র কয়েকদিন আগে বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দলটিকে রুখে দেয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।


১৫ই আগস্ট ঘিরে আওয়ামী লীগের তৎপরতা প্রতিহত করতে রেজিস্ট্যান্স উইক পালন শুরু করে তারা।


এমন প্রেক্ষাপটে কয়েকদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। বুধবার রাতেও মিছিল সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।


বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশেপাশে অবস্থান নেন শিক্ষার্থী ও কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরা।


সায়েন্সল্যাব, জিগাতলাসহ কাছাকাছি বিভিন্ন পয়েন্টেও অনেকে জড়ো হন।


তবে, দলীয় প্রধানের আহ্বান সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ বা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের উপস্থিতি চোখে পড়েনি কোথাও।

বদলে যাওয়া দৃশ্যপট

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ৩২ নম্বর তো বটেই আশেপাশের এলাকাও ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে যেতো। দূর-দূরান্ত থেকে ভেসে আসতো শেখ মুজিবুর রহমানের রেকর্ডকৃত ভাষণ।


কিন্তু, এই ১৫ অগাস্টে একটি ব্যানারেরও দেখা মেলেনি পুরো এলাকায়। আশেপাশের কোন এলাকায় এই দিনটি ঘিরে কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানের কথাও শোনা যায়নি।


ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন যেটিকে 'বঙ্গবন্ধু জাদুঘর' বানানো হয়েছিল, তার ঠিক সামনের সড়কটি দুই প্রান্ত থেকে ব্যারিকেড ও কাঁটাতার দিয়ে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখা রয়েছে। ভেতরে অবস্থান করছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।


এছাড়া, ৩২ নম্বরের আশেপাশের সড়কে সেনাবাহিনী ও বিজিবির পাশাপাশি স্বল্প সংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিও চোখে পড়ে।


বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ শ্রদ্ধা জানাতে যেতে চাইলে অবস্থানকারীদের তোপের মুখে পড়তে হয় তাদের।


৩২ নম্বর সড়ক সংলগ্ন সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাক-বিতন্ডার কোনো এক পর্যায়ে কয়েকজনকে লাঠি-সোটা নিয়ে ধাওয়া দেওয়া বা মারধোর করা হচ্ছে।


এই স্থানটিতে আশেপাশের এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সক্রিয় দেখা যায়। তাদের কেউ কেউ আক্রান্তদের বাঁচানোর চেষ্টাও করেন।


এসময় পথচারী বা সাধারণ মানুষদের কেউ ছবি তোলার চেষ্টা করলে তার দিকে তেড়ে আসছিলেন বিক্ষুব্ধরা।


সাংবাদিকদেরও নিষেধ করছিলেন ছবি তুলতে।


ফিরিয়ে দেয়া হয় কাদের সিদ্দিকীকে

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।


অবস্থানকারীরা ফিরিয়ে দেয় তাকে। এসময় তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।


তবে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছেন মি. সিদ্দিকী।


বিবিসি বাংলা"সেখানে অনেক উত্তেজিত লোকজন দেখলাম, ছাত্রদের দেখলাম। আমাকে বলেছে আপনি চলে যান, আমি চলে এসেছি। আমার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। যাদের সাথে কথা হয়েছে তারা কিন্তু সুন্দর আচরণ করেছে।"


"যখন কোনো অন্যায় কাজ বেশি হয়, তখন দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাত্ররা যে বিজয় অর্জন করেছে সেটি ঐতিহাসিক বিজয়। এটাকে ধরে রাখতে হলে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এখন আমাকে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যেতে দেয়নি বলে আমি যদি ক্ষুব্ধ হয়ে যাই অথবা আমার গাড়ি ভাঙছে... তারা হয়তো আমাকে চিনেও না," বলছিলেন মি. সিদ্দিকী।

দ্রুত পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


সরকারি ছুটি এবং শোক দিবস এক নয় উল্লেখ করে মি. সিদ্দিকী বলেন, "সরকার বদল হলে ছুটি বাতিল হতে পারে। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার প্রধানতম ভুল, ১৬ বছর রাষ্ট্র চালিয়েছে কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে দেশের বানাতে পারেনি। শুধু আওয়ামী লীগের বানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কোনো দলের ,মতের, গোষ্ঠীর, ব্যক্তির বা পরিবারের হতে পারেন না। তারা মারাত্মক ভুল করেছে।"


"আমি এতবছর যাবৎ আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিত, তারপরও এই আন্দোলনকারীরা যদি আমাকে তাদের শত্রু ভাবে তাহলে এটা তো আমার জন্যও দুর্ভাগ্যজনক। তারপরও বলবো, দেশের মানুষের যদি স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়, জান, মাল, নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় সেটিও আমার জন্য গৌরবের," যোগ করেন তিনি।

মোবাইল ফোন তল্লাশির প্রতিবাদ

ধানমন্ডি এলাকায় মোবাইল ফোন তল্লাশি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।


এর পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।


ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি লেখেন, "ছাত্রলীগ ফোন চেক করলেও প্রাইভেসি লঙ্ঘন, আপনারা আজকে যেটা করলেন সেটাও প্রাইভেসি লঙ্ঘন। প্রাইভেসি লঙ্ঘন যেই করবে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান থাকবে।"


আরেক সমন্বয়ক রিফাত রশীদ এক বার্তায় লেখেন, আজকের "সর্বাত্মক অবস্থান" কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ফোন চেক করে হেনস্তা করার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।


"বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্পষ্ট করে বলতে চায়, মানুষের প্রাইভেসি বিনষ্ট হয় এমন কোনোকিছুই আমরা সমর্থন করি না। এমন কাজ পুরোনো বৈষম্যের দৃষ্টান্তকেই আবার নতুনভাবে ডেকে আনছে। তাই ফোন চেক সহ নাগরিকের ব্যক্তিজীবনের স্বাভাবিক যাত্রা বিনষ্ট হয় এমন কিছুই করবেন না," বলেন মি. রশীদ।


আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছিল রাজধানীর শাহবাগে। মিছিল, পথনাটকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ক্ষমতাচ্যুত দলটির পাল্টা তৎপরতা রুখে দেয়ার কথা বলেন শিক্ষার্থীরা।


আপনাদের মতামত আমাদেরকে জানান কমেন্টের মাধ্যমে 

bdnewstoday360  প্রতিদিন নতুন খবর পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ 

No comments:

Post a Comment